ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় শিপু হত্যাকান্ডে অগ্রগতি নেই, মামলা তুলে নিতে বাদিকে হুমকির অভিযোগ

shipu-kildএম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বহুল আলোচিত প্রবাসী যুবক হেলাল উদ্দিন শিপু হত্যাকান্ডের কোন কুল কিনারা করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন। এমনকি মামলার কোন আসামিকে ঘটনার পর ১১মাস সময় অতিবাহিত হলেও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থার কারনে কার্যত দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছেনা আলোচিত মামলাটি। অপরদিবে মামলার এজাহারনামীয় আসামীরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও অজ্ঞাত কারণে তাঁরা গ্রেফতার হচ্ছেনা। বেশ ক’জন তদন্ত কর্মকর্তা রদবদলের পর সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করছেন কক্সবাজার সিআইডি পুলিশ। বাদির পক্ষের দাবি, তদন্তের দায়িত্ব ন্যাস্ত হলেও অধ্যবদি সিআইডির কোন কর্মকর্তার সাথে মাঠে সাক্ষাত পাননি বাদি ও তার পরিবার। তদন্ত সংস্থার এমন নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারনে মামলাটির ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন নিহত হেলাল উদ্দিন শিপুর পরিবার।

এদিকে মামালার এজাহারনামীয় অন্যতম আসামী মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী তার ভাই শিবির নেতা এস্তেফাজুর রহমান, জেলা বিএনপি নেতা ইউছুপ বদরী এবং বদরখালীর সাবেক চেয়ারম্যান হোছাইন আহমদকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদি নিহতের মা ছকিনা বেগম (৯০)। এমনকি মামলাটি তুলে নিতে আসামি পক্ষের লোকজন নানাভাবে হুমকি ধমকী দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদি।

পারিবারিক সুত্র জানায়, বদরখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়া গ্রামে ভূমি বিরোধের জের ধরে প্রভাবশালী গত বছরের ৩নভেম্বর প্রতিপক্ষের গুলিতে বিদেশ ফেরত যুবক হেলাল উদ্দিন শিপুকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার কয়েকজন আসামী গ্রেফতার হলেও তারা বর্তমানে জামিনে এসে বাদিকে হুমকি দি”েছ। তাছাড়া প্রভাবশালী আসামীরা এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে-বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এদিকে বিএনপি নেতা একেএম ইকবাল বদরী গত ৫অক্টোবর বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নির্বাচনে সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি আত্মগোপনে থাকলেও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা বিভিন্ন ভাবে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করছেন বাদিকে।

নিহত শিপুর মা ছকিনা বেগম জানান, জমির বিরোধ নিয়ে তার ছেলেকে নৃসংশভাবে খুন করার ঘটনায় সরাসরি হত্যাকান্ডের নেতৃত্ব দেন বিএনপি নেতা একেএম ইকবাল বদরী। তাছাড়া ইকবাল বদরী এ হত্যাকান্ডের সময় সমিতির সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। গত ৫অক্টোবর সমিতির সম্পাদক পদে পূনরায় নির্বাচিত হওয়ায় হত্যা মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন তিনি। বাদী ছকিনা বেগম আরও বলেন, ‘হত্যাকান্ডের প্রায় ১১মাস পরও এই মামলার দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। কোন আসামীও গ্রেফতার করেনি সিআইডি পুলিশ। তাছাড়া এঘটনার পর যে কয়জন গ্রেফতার করা হয়েছিল তারা জামিনে বেরিয়ে এসেছে। এখন তারা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। এতে পরিবার সদস্যদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েও কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। সিআইডি পুলিশ বার বার তদন্তে যাওয়ার কথা বললেও আজ পর্যন্ত তারা এলাকায় যায়নি। গাফেলতি ও অনগ্রসরতার কারণে উর্ধ্বতন পুলিশ প্রশাসনের কাছে গত ৯ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলানোর জন্য একটি আবেদনও করেছেন মামলার বাদি।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক জাকির হোসেন বাদীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদেরও স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে চার্জশীট থেকে আসামী বাদ দেওয়া না দেওয়ার কোন বিষয় নয়। বরং যারা প্রকৃত আসামী তাদের নামে অধিকতর তদন্ত করে চার্জশীট দেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: